freatured banner

বিয়েতে মাইক বাজানোয় কনের বাবা-মাকে বেত্রাঘাত!

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বর ২৭, ২০২৫, ০৬:৩৮

বিয়েতে মাইক বাজানোয় কনের বাবা-মাকে বেত্রাঘাত!
বেত্রাঘাত

নোয়াখালীর হাতিয়ায় বিয়ে বাড়িতে সামান্য সময়ের জন্য মাইক বাজানোকে কেন্দ্র করে এক কনে, তার মা–বাবা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বেত্রাঘাতসহ কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। ক্ষমা চাইলেও রেহাই মেলেনি; উল্টো দাবি করা হয়েছে মোটা অঙ্কের জরিমানা। জরিমানার টাকা দিতে না পারায় জামাইয়ের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম অটোরিকশাটিও আটকে রাখা হয়েছে। বর্তমানে পরিবারটি চরম অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।


বুধবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে একটি অনানুষ্ঠানিক গ্রাম্য সালিশে এ অমানবিক রায় দেওয়া হয়।

freatured banner


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে বুড়িরচরের শাহজাহানের মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন হলেও অনুষ্ঠান করা হয়নি। গতকাল সেই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলে পরিবারটি আনন্দে কিছু সময়ের জন্য মাইক ব্যবহার করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কয়েকজন এসে জবাবদিহি চাইলে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পরে এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি গ্রাম্য সালিশ বসান।


মেয়ের বাবা শাহজাহান জানান, গরিব পরিবার হওয়ায় সীমিত আয়োজনেই বিয়ের অনুষ্ঠান করেছেন। তিনি বলেন, পরিবারের আনন্দে সামান্য মাইক বাজানোর অপরাধে আফসার, ছারোয়ার ও মালেক তার পরিবারের সদস্যদের মারধর করেন। পরে সালিশ বসিয়ে আলাউদ্দিন মাঝি, তছলিম, আনোয়ার মাঝি, সেন্টু ও রফিকসহ সালিশদাররা তাদের সবাইকে ১৫টি করে বেত মারার সিদ্ধান্ত দেন। বারবার ক্ষমা চাইলেও কেউ কর্ণপাত করেনি। বেত্রাঘাতের পর আরও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়। তিনি বলেন, জরিমানার টাকা না দিতে পারায় আফসার তার মেয়ের জামাইয়ের অটোরিকশা আটকে রেখেছে। বহু মানুষের কাছে বিচার চাইলেও কোনো সমাধান পাননি।


সালিশে উপস্থিত আলা উদ্দিন মাঝি বলেন, মাইক বাজানো নিয়ে আফসারের প্রশ্নের জেরে হট্টগোল বাধে এবং সেখানে আফসারের ৫০ হাজার টাকা হারিয়ে গেছে বলে দাবি ওঠে। যদিও এর কোনো প্রমাণ মেলেনি। তিনি জানান, সালিশদারদের একজন ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ হাজার টাকার রায় দেন। তার দাবি, নারীদের বেত মারা হয়নি; পুরুষ সদস্যদেরই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আর নারীদের শাসনের দায়িত্ব ‘ঘরের মুরুব্বি’ হিসেবে শাহজাহানের ওপরই দেওয়া হয়েছে—তিনি বেত মারবেন।


স্থানীয়দের মতে, এ ধরনের সালিশ সম্পূর্ণ বেআইনি। বাংলাদেশের আইনে ফৌজদারি অপরাধের বিচার ও শাস্তির এখতিয়ার কেবল আদালতের। গ্রাম্য সালিশে শারীরিক শাস্তি দেওয়া আইনবিরোধী। এটি শুধু ব্যক্তিস্বাধীনতার লঙ্ঘন নয়, বরং ফৌজদারি অপরাধ। মাইক বাজানোর মতো তুচ্ছ বিষয়ে পরিবারকে এভাবে নির্যাতন ও আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়; দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।


সাগরিয়া ফাঁড়ির এসআই ফরহাদ হোসেন জানান, বিয়েতে মাইক বাজানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান এবং উভয়পক্ষকে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করার পরামর্শ দেন। তার বক্তব্য— এরপর সালিশ শুরু হওয়ায় তিনি সেখান থেকে সরে আসেন এবং পরে তাকে আর কিছু জানানো হয়নি। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

google-news-feed আমার সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

সারাদেশ

logo
সর্বশেষ সংবাদ